কবি আব্দুল লতিফ প্রামাণিক এর লেখক হয়ে উঠার গল্প
কবি ও কথাসাহিত্যিক আব্দুল লতিফ প্রমাণিক
কিশোরগঞ্জ,নীলফামারী।
আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি,আমার বাড়ির উঠানের এক কোনে ছোট্ট একটা দোকান ছিল। দোকানে তেল-লবণ,চাল-ডাল,বিড়ি-সিগারেট থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি পাওয়া যেত। গ্রামের লোকজন তখন বিড়ি টানতো,বিড়ির পাশাপাশি তামাকের নাশা দিয়ে ও ধুমপান করত। আর তামাকের নাশা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো নিউজ প্রিন্টের গেজেট। যা শহরের বা গঞ্জের বড় মুদি খানার দোকান থেকে খুচরা পাইকাররা কেজি দরে কিনে প্রতি তা বা পাতা পঞ্চাশ পয়সা দরে বিক্রি করত। মুলত দোকানটা ছিল আমার ভাইয়ের সেই সুবাধে দোকানটায় ঢোকার অবাধ সুযোগ পেতাম আর গেজেট গুলো একটা একটা করে গোছাতাম। কিছু গেজেটে সাহিত্য পাতা চোখে পড়ত সেগুলো আলাদা করতাম এবং আমার পড়ার ঘরে এনে কবিতা ও ছড়া গুলো পড়তাম,খুব ভালো লাগত। এ ছাড়াও ক্লাশে যখন কবিতা পড়তাম নিজের অজান্তেই হারিয়ে যেতাম কবিতার মাঝে। খুব ইমোশনাল হয়ে যেতাম,এত সুন্দর সুর-ছন্দ,তাল-লয় আমাকে বিমুগ্ধ করত। এক সময় নিজের মধ্যে একটা স্পৃহার জন্ম নিল এবং আমিও ছড়া কবিতা লেখা শুরু করলাম। জানি না সেগুলো কবিতা হতো কি না,তার পরও হাল ছাড়িনি লিখেই যেতাম আর খাতার পৃষ্টা ভরাতাম ইচ্ছে মত। রেডিওতে গান শুনতাম,অনুরুপ গান লেখার চেষ্টা করতাম,গান হোক আর না হোক লিখতাম। তখন থেকেই কবিতা ছড়া ও গান লেখার প্রতি আমার হাতেখড়ি। কবিতা লিখতে চাইলেই লেখা যায় না,সারাদিন মাথা ঠুকিয়েও দুই লাইন বের হতে চায় না,আবার যখন কবিতা আসে তখন লেখার সময় টুকুও দেয় না। কবিতা আপনা থেকে আসে তবে মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হয়।
মুলত আমি সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছি আমার কলেজ জীবনে। বিভিন্ন পেক্ষাপটে কবিতা হুর হুর করে বের হয়ে এসেছে। ১৯৯৬ সালে আমি তখন ইন্টার মেডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করি,দৈনিক দাবানল পত্রিকায় প্রকাশিত আমার একটা কবিতা ছিল”কালো মেঘ”যার জন্য আমাকে রংপুর সদর থানায় ওসি সাহেবের কাছে মুছলেখা দেওয়া লাগছে যেন আমি আর মৌলবাদী বা বিদ্রোহী কবিতা না লিখি। যে কথা স্মরণ হলে এখনো গা শিউরে ওঠে,তবে যতই দিন গেছে সেই ভয়টাই আমার শক্তিতে পরিণত হয়েছে! সেই সময়ে কবিতা লেখা কিছুটা প্রসমিত হলেও পরবর্তী পর্যায়ে আর মৌলবাদী বিদ্রোহী কবিতা ততটা লেখিনা।
আমার ছোট বেলায় আমাদের গ্রামে একটা নাট্য সংগঠন ছিলো সেখানে আমি শিশু শিল্পী হিসাবে অভিনয় করতাম। পরবর্তী সময় যখন কলেজ পড়ুয়া তখন আমি পার্শ্ব চরিত্র ও মূল চরিত্রে অভিনয় করতাম। অভিনয় করেছি কিশোরগঞ্জ থানা থিয়েটার নাট্যশালায়। আমার নিজের লেখা নাটক শেষ পথ,নিরক্ষরতার অভিশাপ,এ মন তোমার হৃদয় কারাগারে এবং লাল সবুজ মঞ্চায়ন হয়েছে। সেখানে আমি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছি।
ছাত্র অবস্থায় অর্থের অভাবে আমার লেখাগুলো প্রকাশনা অব্ধি যেতে পারেনি। আমি যখন ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এসসি পড়ি,তখন চলচিত্র নির্মাতা ও পরিচালক সুবাস দত্ত দাদুর সান্নিধ্য লাভ করি এবং ঢাকা রাম কৃষ্ণ মিশন মন্দিরে প্রতি শুক্রাবার ওনার সাথে সময় কাটাতাম। ভালো ভালো অনেক উপদেশ আমি তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি এবং তারই সান্নিধ্যে থেকে আমার ঢাকা মহানগর নাট্য মঞ্চেও অভিনয় করার সুযোগ হয়েছিল।আমার একাধিক উপন্যাসও আছে,যা এখনও আলোর মুখ দেখতে পারেনি। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে কয়েকটি ছোট গল্প ও প্রবন্ধ।
দীর্ঘকাল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার কারনে আমার লেখালেখি কিছুটা স্তিমিত হলেও ২০১০সালে আমি সরকারি চাকুরিতে যোগদান করি এবং সোশাল মিডিয়া Facebook চলে আসে যার ফলে কবি সাহিত্যিকদের সামনে নব বিপ্লব শুরু হয়। মিডিয়ার উৎকর্ষতায় সব ধরনের কবির সমাগম ঘটে,অসংখ্য সাহিত্য গ্রুপ তৈরি হয়,শুরু হয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক বিভিন্ন সাহিত্য প্রতিযোগিতা। সেখানেও শুরুর সময়টাতে আমি পিছিয়ে ছিলাম একটা এ্যানড্রয়েড ফোন না থাকার কারনে। ২০১৬সালে এ্যানড্রয়েড ফোন কিনি এবং বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপের সাথে যুক্ত হই। ছোট ভাই কবি ও গল্পকার মোশফিকুর রহমানের মাধ্যমে সাহিত্য রস লিটিল ম্যাগ পত্রিকার সম্পাদকের সহিত পরিচয় হয় এবং তার কাছ থেকে সাহিত্যের খুঁটিনাটি বিষয়ে ধারণা পাই। নিয়মিত সাহিত্য রসের পেজে প্রতিযোগিতা শুরু হয়,সেখানে স্বতফুর্ত অংশ গ্রহন করি এবং সে বছরের শেষে নভেম্বর মাসে লেখক আবু আফজাল সালেহ অফিসার বিআরডিবি লালমনিরহাট এর একটা বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য আমাদের উত্তর বঙ্গের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রামে শ্রম কল্যান পাঠাগারে এক অনারম্বর অনুষ্ঠান হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে আমি সঞ্চালনার দায়িত্ব পাই,এবং বিজয়ী লেখক স্বীকৃতি স্বরুপ আমাকে লেখক সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। সেই থেকে আমার লেখক হয়ে পথ চলা শুরু। পরবর্তী পর্যায়ে আমি কিশোরগঞ্জ উপজেলার স্বনামধন্য সাহিত্য সংগঠন সাহিত্য শিখা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে যোগদান করি এবং নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করি। সাহিত্য শিখা পরিষদের সকল সদস্যগনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরনায়,২০২০ইং সালে রংপুর পাতা প্রকাশ প্রকাশনার মাধ্যমে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ” মন পবনের নাও ” আত্ম প্রকাশ করে এবং সারা দেশে ব্যাপক সাড়া জাগায়। দেশ বিদেশের বন্ধুদের কাছ থেকেও উৎসাহ উদ্দীপনা স্বরুপ ফোন কল ও ম্যাসেজ পাই তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১/২০২২ইং সালে করোনা কালীন সময়ে না হলেও ২০২৩ ইং সালে আমার দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ”নীলাঞ্জনার দেশে”কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয় এবং ইলেকট্রোনিক মিডিয়া সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ব্যাপক সাড়া জাগায়। আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ” নীলাঞ্জনার দেশে”কাব্য গ্রন্থখানী জাতীয় কবিতা মঞ্চ কতৃক আয়োজিত ২২টি দেশের কবি সাহিত্যিকদের বইয়ের মধ্যে সেরাদের সেরা গ্রন্থ হিসাবে মনোনীত হয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম পয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল এওয়ার্ড পাই এছাড়াও অল বাংলাদেশ ১৯৯৫ এসএসসি ব্যাচের পক্ষে রংপুর বিভাগীয় এসএসসি ১৯৯৫ব্যাচ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় আমাকে সম্মাননা স্বারক প্রদান করে। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রুপ, সোশাল মিডিয়া সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রিতার সাহিত্য পাতায় আমার লেখা কবিতা,ছড়া,মৌলিক গান ও ছোট গল্প নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে,রেকর্ডিং হচ্ছে বিভিন্ন স্টুডিওতে আমার লেখা মৌলিক গান। সাংসারিক ও অফিসিয়াল কাজের চাপে হয়তো সেভাবে সাহিত্য চর্চার সুযোগ পাইনা তবে স্বপ্ন দেখি বাংলা সাহিত্যধারাকে পরিবর্তনের।
প্রিয় লেখক,শুরু হয়েছে আমাদের নিয়মিত আয়োজন লেখক হয়ে ওঠার গল্প! এই আয়োজনের অংশিদার হতে পারেন আপনিও! তাহলে আর দেরি কেন এবার পাঠিয়ে দিন আপনার লেখক হওয়ার অজানা গল্পটি।