টিউশনির দিনগুলো
মোঃ মোশফিকুর রহমান
প্রাইভেট পড়াতে এসে প্রথম দিনেই তোছাদ্দেকের অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা হলো। এর আগে গ্রামের অনেককে সে এর আগে প্রাইভেট পড়িয়েছে,কিন্তু শহরে এসেই যেনো অন্যরকম পরিবেশ লাগছে তার কাছে! সদ্য অনার্সে চান্স পাওয়া টগবগে যুবক তোছাদ্দেক,আর্থিক সমস্যায় বন্ধু রবিউলের সহায়তায় অনেক কষ্টে একটা টিউশনি জোগাড় করে। রবিউল আগে থেকেই দিনাজপুর শহরে টিউশনি করে নিজের পড়াশোনা ও খরচাপাতি চালায়। কিন্তু তোছাদ্দেক অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হলেও টিউশনি ম্যানেজ হচ্ছিল না।সবার এক কথা,কোনো কিন্ডারগার্টেন নয়তো কোচিংয়ের রানিং টিচার দরকার! তারা বুঝতেও চায়না ডিপার্টমেন্টের অকেজো ছাত্রগুলো দিয়েই দিনাজপুরের অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং সেন্টারগুলো পূর্ণ! কিন্তু কে বোঝাবে তাদের! অবশেষে রবিউলের সৌজন্যেই তার ভাগ্য খুলে গিয়েছিল,কিন্তু ছাত্রীর হাবভাব দেখে তার সুবিধার মনে হচ্ছেনা। প্রথম দিনেই তার দিকে হা করে চেয়ে আছে,মনে হচ্ছে জীবনে কোনো যুবক ছেলে দেখেইনি। আর মাঝেমধ্যেই কি বিশ্রী ভাবে তার দিকে চেয়ে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে! আচ্ছা ব্যপারটা কি,এ মেয়ে তোছাদ্দেকের পানে এভাবে বারবার চেয়ে দেখছে কেন!
তোছাদ্দেক সবে দিনাজপুর সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে। দিনাজপুরে তার তেমন জানাশোনা নেই,এক রবিউলই তার ভরসা! তাই সে তার কাছে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে একটা টিউশনি ঠিক করে দিতে অনুরোধ করল! তবে এটাও বলে দিলো,টিউশনিটা যেনো কোনো ছাত্রের হয়। রবিউলের একটু মহিলাদের গা ঘেঁষা স্বভাব,পাড়ার ভাবিদের সাথে খুব সহজেই জমিয়ে ফেলে! বালুবাড়িতে যেখানে সে পড়ায় পুরো পাড়ার বউ-ঝিদের সাথেই তার সুপার গ্লু আঠার মতোই সম্পর্ক! টিউশনি ম্যানেজ করাটা তার কাছে কোনো ব্যপারই নয়! কিন্তু তার কথা টিউশনি পড়ালে মেয়েদেরই পড়াটাই মজার! কঁচি মেয়েদের বিশেষ করে নবম দশমের মেয়েরা টিনএজ বয়সের,এদের মন উড়ুউড়ু,এরা খুব সহজেই প্রেমে পরে যায়। আর স্কুল লাইফ শেষে কলেজ লাইফে গেলে অন্যকারো হাত ধরে ভেগে যায়! এভাবে টিউশনির টাকাও আয় হয়,আবার কঁচি মেয়েদের সাথে টাইমপাস করে মজাটাও লুঠে নেওয়া যায়! আবার সুযোগ বুঝে ছাত্রীর হালকা বয়সী মায়েদের সাথেও মাস্তি করা যায়! এ যেনো একের ভিতরে অনেক প্যাকেজের মতো।
রবিউল দিনাজপুর আসার প্রাক্কালে অনেক হালকাপাতলা রোগাটে ছিলো,কিন্তু এই কিছু দিনের ভিতরে তার শরীরের মধ্যে মেদ জমতে শুরু করেছে। যে ছেলের ঠিকমতো মুখ দিয়ে কথাই বের হতোনা এখন সেই রবিউলই পাড়ার ভাবিদের ক্রাশ,ভাবা যায়!
রবিউল তোছাদ্দেককে অভয় দিলো,দেখ দোস্ত তোকে নাইন টেনের মেয়েদেরই পড়াতে হবে! নয়তো তুই উকুসুর টেনশনে একেবারেই ভেঙে পরবি। আমরা তোছাদ্দেকের এক্স গার্লফ্রেন্ডকে এই উপনামেই ডাকতাম। মেয়েটা তোছদ্দেকের সাথে পাঁচ পাঁচটি বছর প্রেম করে ধোঁকা দিয়ে,নায়ক বাপ্পারাজের মতো করে দিয়েছে! তাই এখন তোছাদ্দেক সব মেয়েদেরই ধোঁকাবাজ ভাবে! তাইতো উকুসু চলে যাওয়ার পরে তার শূন্যস্থান পূরনে আমাদের বান্ধবী শিরিন এগিয়ে আসলেও সে সাড়া দেয়নি! সে জানে মেয়েরা একটু টাকা ওয়ালা মাল পেলেই সবকিছু ঢেলে দিয়ে ভেগে যাবেই। কি দরকার অযাচিত প্রেম ভালোবাসায় জড়ানোর! এর চেয়ে যেমন আছি তেমনি তো ভালো।
যাই হোক আমাদের পরকীয়া স্পেশালিস্ট বন্ধু রবিউল তোছাদ্দেকের কাছে এই যুক্তি উপস্থাপন করলো,কঁচি মেয়েদের পড়ালে তোর মনটা ভালো থাকবে,চাইলে একটু আধটু মজা নিতে পারবি তখন তোর আর উকুসুর কথা মনেও পারবেনা। আর বর্তমানে শহরের মহিলারা একটু অন্য স্বভাবের,একটুতেই পরকীয়ায় জড়াতে চায়! চাইলে কোনো সুন্দরী ভাবীর সাথে পরকীয়া প্রেম জমাতে পারিস। পরকীয়া প্রেমের সুবিধা কিন্তু অনেক,মজা নিবি কিন্তু কোনো ঝামেলা নেই! বলে হো হো করে রবিউল হেসে উঠলো।
আচ্ছা তুই কি পরকীয়া প্রেম করিস!
– কিযে বলিসনা শহরের অল্পবয়সী মহিলারা সব বদের হাড্ডি,তাদের চাহিদা না মেটালে টিউশনিটাই তো হাতছাড়া হবে,হাহাহা!
আমরা সবাই তার সাথে হেসে উঠলাম,তবুও তোছাদ্দেকের কপালে একটু বিষন্নতার ভাঁজ স্পষ্ট। সে ভাবছে টিউশনিটা কি শুরু করবে,নাকি কিছু দিন অপেক্ষা করবে! কিন্তু টিউশনিটা না করলে তার পড়াশোনাটা বন্ধ হয়ে যাবে। আচ্ছা টিউশনিটা শুরু করেই দেখিনা কি হয়! অনেক চিন্তা ভাবনার পরেই সে টিউশনিটা শুরু করলো। কিন্তু প্রথম দিনেই তার সাথে ফাজিল মেয়েটা কি সব শুরু করলো!
প্রতিদিন বিকেল চারটা হতে সন্ধ্যা ছয়টা পযন্ত মন্টিকে পড়াতে হয়! মেয়েটা পড়াশোনায় তেমন ভালো না হলেও চেহারা সুরত কিন্তু মাসআল্লাহ্! তারপরেও প্রতিদিন প্রাইভেট পড়ার আগে মেয়েটা মনে হয় অনেক সময় নিয়েই সাজগোজ করে। তবে আর যাই হোক মন্টির কালার করা চুলগুলো তোছাদ্দেকের অনেক ভালো লাগে! এতোদিন সে নাটক সিনেমায় নায়িকাদের রঙিন চুল দেখেছে,কিন্তু এখন জলজ্যান্ত সিনেমার নায়িকা তার সামনে বসে থাকে। মাঝেমধ্যে তোছাদ্দেকের ইচ্ছে হয় চুলগুলো স্পর্শ করে দেখার,কিন্তু সাহস হয়না যদি টিউশনি টা চলে যায়।
একদিন দুদিন করে তিনমাস অতিবাহিত হলো,মন্টির পড়াশোনায় তেমন পরিবর্তন আসছেনা! তোছাদ্দেকের তো চিন্তার শেষ নেই,ছাত্রী সামনে পরীক্ষায় ভালো না করলে তো টিউশনিটা হারাতে হবে। তাই শেষমেষ আবারও রবিউলের শরণাপন্ন হলো। ছাত্রীর পড়াশোনার বিস্তারিত বলল। রবিউল এই কিছু দিনেই শহরের টিনএজ মেয়ে ও তাদের হালকা বয়সি মায়েরের নিয়ে অনেক গবেষণা করেছে! সে এখন তাদের মুখ দেখামাত্র খুব সহজেই বুঝতে পারে তারা আসলে কি চায়! তার অভিজ্ঞতার ভান্ডারও অনেক শক্তিশালী। সে তোছাদ্দেকের বিষয়টা আন্দাজ করতে পারলেও সরাসরি কিছু না বলে তাকে প্রশ্ন করতে শুরু করলো!
– আচ্ছা দোস্ত তোর ছাত্রী কি তোকে স্যার বলে?
না,ভাইয়া ডাকে।
– তুই যখন পড়া বোঝাস তখন বইয়ের দিকে তাকায়,না তোর মুখের দিকে তাকায়?
মুখের দিকেই তো বেশি তাকিয়ে থাকে!
– আচ্ছা তোকে দেখে হাসাহাসি করে?
হুম,মাঝে মঝেই মুচকি হাসে!
– যখন তুই পড়াস,তখন ওর মা কোথায় থাকে।
প্রায়ই পাশের বাসার ভাবিদের নিয়ে ঘুরতে যায়,গল্প করে।
– আচ্ছা এ সময়টায় অন্যকিছু টের পাশ!
যেমন?
– এই ধর তোর ছাত্রী অযথাই খাতায় এটা সেটা লিখছে,পাতা ছিঁড়ে ফেলছে!
হুম,প্রতিদিনই তাই করে,তবে মাঝে মধ্যে পায়ের উপর চাপও দিয়ে বসে! তখনই মুচকি হেসে মুখ অন্যদিকে নিয়ে যায়!
– তুই কিছু বলিসনা?
আমি মনে করি এটা ভুলে লাগে,তাই কিছু বলিনা।
– এবার বুঝেছি বন্ধু,তোর ছাত্রী পুরোপুরি তোর প্রেমে মগ্ন হয়ে আছে।
তো আমি কি করবো?
– তার সাথে প্রেম কর,দেখবি সবকিছু ঠিক হয়েগেছে। শহরের মেয়েরা প্রেমের জন্য সবকিছুই করতে রাজি। তাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ ফেরাতে হবে নয়তো টিউশনি হারাতে হবে। এখন তুই ঠিক কর,তুই কোন পথে যাবি!
পুরো রাতটা তোছাদ্দেকের একটুও ঘুম হলোনা! সে চিন্তায় চিন্তায় অস্থির,এখন তার কি করা উচিত। সে কি মন্টির সাথে প্রেম করবে,নাকি নিজেই টিউশনিটা ছেড়ে দেবে! টিউশনিটা ছেড়ে দিলে তার পড়াশোনাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। তার চোখেমুখে আজ একরাশ চিন্তার মেঘ। দূরের মসজিদ হতে ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি,তারমানে ভোর হয়ে গেছে তবুও তার চোখে ঘুম নেই। এমন সময় একটা বুদ্ধি মাথায় এলো,আচ্ছা সে যদি প্রেম না করে প্রেমের অভিনয় করে তবে কেমন হয়? জীবনের প্রয়োজনে একটু অভিনয় করলে দোষ কী! তোছাদ্দেকের চোখেমুখে হঠাৎই আশার আলো জ্বেলে উঠলো,সে চিন্তা মুক্ত হয়ে একটা গভীর ঘুম দিলো।
তার ঘুম ভেঙেগেলো দুপুরে খাওয়ার সময়! মেসের বুয়া এসে ডাকাডাকি শুরু করছে, সকালে তো খাননি দুপুরেও খাবেননা;ওঠেন তাড়াতাড়ি খেয়েনেন! তোছাদ্দেক ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে দুপুর দুইটা! সে দ্রুত ঘুম থেকে উঠে গোছল ছেড়ে খেতে গেলো! দুপুরের খাওয়া শেষ করে মনের আনন্দে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে মুখে ক্রিম লাগিয়ে সাজছে! তারপর পুরো শরীরে বডি স্প্রে দিয়ে সুগন্ধি ছড়ালো। এরপরে পুরোনো রেঞ্জার সাইকেলটা নিয়ে বালুবাড়িতে টিউশনির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
ওদিকে মন্টিও তার স্যারের অপেক্ষায় অপেক্ষমান! আজ তোছাদ্দেককে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে। দূর হতে তোছাদ্দেককে দেখে মন্টির অপরিচিত লাগছে,মনে হচ্ছে ঢাকাই সিনেমার কোনো নায়ক আসছে তারদিকে। তবে হাতে থাকা পরিচিত সাইকেলটা দেখে সে নিশ্চিত হলো এটা তোছাদ্দেকই!আর তার মুখে যেনো শোভা পাচ্ছে অনাবিল হাসির আভা,সত্যিই কল্পনাতীত! মন্টি ভেবে পাচ্ছেনা যে মানুষটা সবসময় মুখটা গোমরা করে থাকে তার মুখে এতোটা হাসি এলো কিভাবে,সত্যিই সে বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে! মন্টি বলেই বসলো,ভাইয়া আজকে আপনাকে অন্যরকম লাগছে;একদম হ্যান্ডসাম কারণটা কী?
– হুম,কারণ তো একটা আছে,বলা যাবেনা!
বলেননা ভাইয়া শুনি!
– না বলেবো না!
না না প্লিজ বলেননা।
– হুম,আজ স্পেশালী আমি তোমাকে কিছু বলার জন্যই এসেছি। অনেক দিন বলতে চেয়েও পারিনি,কিন্তু আজ বলবো।
ভাইয়া আমিও আপনাকে কিছু বলতে চেয়েছি,কিন্তু লজ্জায় বলতে পারিনি! আমি আপনাকে আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছি কিন্তু আপনি বোঝেননি!
– আরে বোকা মেয়ে আমি সব বুঝেছি,কিন্তু এতোদিন না বোঝার ভান করেছিলাম!
আপনি অনেক খারাপ!
– ও তাই বুঝি?
হুম,অনেক!
– আচ্ছা,তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো?
হুম,আমি আপনাকে প্রানের চেয়েও বেশী ভালোবাসি!
– আমার বিশ্বাস হয়না!
কেন বিশ্বাস হয়না?
– আচ্ছা তুমি আমার জন্য কি করতে পারবে?
আমি আপনার জন্য সব করতে পারবো। প্রয়োজনে নিজের জীবনটাও শেষ করতে পারবো। আপনি বলেন কি করতে হবে?
– তোমাকে তেমন কিছু করতে হবেনা,শুধু এবারের পরীক্ষায় ভালো করতে হবে! আর অবশ্যই ক্লাসের ফাস্ট হয়ে পরের ক্লাসে উঠতে হবে,আর এসএসসিতে এ প্লাস পেতে হবে। তবেই আমি তোমাকে ভালোবাসবো।
আপনি তো জানেন আমার পড়াশোনা ভালো লাগেনা! আপনি এটা বাদে যা বলবেন আমি তাই করবো।
– বুঝেছি তুমি আমাকে ভালোবাসোনা! তাহলে আমিও তোমাকে ভালোবাসিনা,ওকে!
ভাইয়া,আপনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন আপনি আমাকে ভালবাসেননা! আমি জানি আপনি আমাকেই ভালোবাসেন।
– শোনো আমার এক কথা,তোমাকে পরীক্ষায় ফাস্ট হতেই হবে। তবেই আমি তোমার হবো,তার আগে নয়।
আমি এতোদিন অপেক্ষা করতে পারবোনা ভাইয়া! তার চেয়ে চলেন না দু’জনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি!
তোছাদ্দেক মনে মনে ভাবছে,এ মেয়ে বলে কি! কি বোঝাই আর কি বোঝে। সে বলল,আগে তোমাকে আমার কথা রাখতে হবে! পরে সব হবে,তবে মাঝেমধ্যে আমরা বাহিরে ঘোরাঘুরি করবো! তবে অবশ্যই সেটা খুব গোপনে।
আচ্ছা ভাইয়া,আমি চেষ্টা করবো।
এভাবে চলতে চলতে দু’টি বছর কিভাবে যে কেটে গেলো,তোছাদ্দেক খেয়ালও করেনি! এই দুই বছর তার জীবনে স্মরণীয় সময়গুলোর একটি। এই সময়ে মন্টির আবদারে সে কোথায় ঘুরতে যায়নি! সিংরা ফরেস্ট,তিস্তা সেচ প্রকল্প,সেতাবগঞ্জ চিনি কল,বাংলাবান্দা জিরো পয়েন্ট,নীলসাগর, রামসাগর,স্বপ্নপুরী,ভিন্ন জগতসহ উত্তরাঞ্চলের বিনোদন পার্কগুলো একটাও বাকি নেই। মন্টির উষ্ণ ভালোবাসা প্রাণভরে উপভোগ করে করে তোছাদ্দেকের দিনগুলো ভালোই কাটছে। হঠাৎই মন্টির এসএসসির রেজাল্ট বের হলো,সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে তার স্কুলের সেরা হলো। তোছাদ্দেকের খুশির যেনো শেষ নেই,তার টিউশনিতে ক্লাসের শেষ বেঞ্চের ছাত্রী স্কুলের টপ রেজাল্ট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই বিজ্ঞাপনে অন্তত তার অনার্স লাইফটা টিউশনি করে ভালোভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবে। প্রতিবছর রবিউলের মতো নতুন নতুন ছাত্রী পড়াবে আর এক দু’বছর ইনজয় করবে।
কিন্তু সবার কপালে সুখ সয়না! তোছাদ্দেকের ও আনন্দ স্থায়ী হলোনা,সবকিছু এক নিমেষেই শেষ হয়ে গেলো মন্টির এক ফোন কলেই! ভাইয়া আমি কিন্তু আপনার কথা রেখেছি,এবার আপনার আমার কথা রাখার পালা। চলেন আমরা এবার বিয়েটা করি! তোছাদ্দেকের মাথায় হাত,বলে কি!
– মন্টি এখন কিন্তু তোমার পড়াশোনার বয়স,এখনো তোমার সামনে এইচএসসি,অনার্স,মাস্টার্স বাকি! এখন পড়াশোনায় ভালোকরে মনদাও ওসব পরে দেখা যাবে।
কি বলছেন ভাইয়া,আপনি না বলতেন আপনি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন! তাহলে এখন বিয়ে করতে সমস্যা কি। আমি অনার্স মাস্টার্স সব করবো তবে বিয়ের পরে।
– মন্টি আমাকে ক্ষমা করে দিও,আমি আসলে তোমার ভালোর জন্য এতোদিন অভিনয় করে গেছি।
ভাইয়া আপনি অভিনয় জানেন,আমি অভিনয় জানিনা! আপনি যাই করেছেন আমি মেনে নিয়েছি,কিন্তু এখন আপনি চাইলেও আমি আপনাকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারবোনা। আর আপনি তো জানেন আপনার জন্য আমি কি কি করতে পারি! আপনার জন্য নিজের জীবন যেমন সাজাতে পারি,ঠিক এ জীবনের মায়াও ত্যাগ করতে পারি। এবার বলেন আপনি কি করবেন?
– মন্টি অযথা মাথা নষ্ট করিও না! মাথা থেকে প্রেম ভালোবাসার ভুতটা মুছে ফেলে দাও! তুমি আমার থেকেও ভালো কোনো ছেলেকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবে।
না আমার অন্য কাউকে লাগবেনা,আমার শুধু আপনাকেই লাগবে।
মন্টি রাগ করে ফোনের লাইনটা কেটে দিলো। তোছাদ্দেকের আজ প্রচন্ড রকম ঘুম পাচ্ছে,মনে হচ্ছে এই প্রথম শান্তি মতো ঘুমোতে পারবে! সামনে তার জন্য অফুরন্ত সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। তার জন্য মন্টি সুন্দর এক সম্ভাবনার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে! এবছর সে টিউশনির সংখ্যাটা বাড়িয়ে ফেলবে। মন্টির রেজাল্ট বের হওয়ার পর পরেই সাত আটজন টিউশনির জন্য কল করেছিল। সত্যিই এখন থেকে তাকে আর টিউশনি জোগাতে অন্যের উপর নির্ভর করতে হবেনা। এইসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে সে জানেনা।
সকাল দশটায় রবিউলের ডাকে তার ঘুম ভাঙলো। শালা এতো বেলা ঘুমাচ্ছিস,আর ওদিকে একটা সর্বনাশ হয়েগেছে!
– কেন কী হইছে?
দোস্ত তোর মন্টি সুইসাইড করছে!
– বলিস কি,কখন?
জানিনা,ওদের পাশের বাসার ভাবি ফোন করে জানালেন। গলায় ফাঁস দিছিলো,সকাল বেলা পুলিশ এসে মর্গে নিয়ে গেছে ময়নাতদন্তের জন্য। ওর ব্যবহৃত ফোনটাও নিয়ে গেছে চেক করার জন্য! সব চ্যানেলে নিউজ দেখাচ্ছে দিনাজপুরে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার রাতেই স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা!
হঠাৎই তোছাদ্দেকের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো,কি করতে চেয়ে কি হয়ে গেলো! তার উজ্জ্বল মুখখানা ফ্যাকাশে আকার ধারণ করলো! তার মুখের উপর চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। আমার জন্যই মন্টির এমন পরিনতি হলো! থানা পুলিশের ঝামেলায় পরলে তো আমি পুরোই ফেঁসে যাবো! আল্লাহ আমি এখন কি করবো। এটা ওটা ভেবে হঠাৎই কাধে একটা ব্যাগ নিয়ে কাউকে কিছু না বলেই সে রাস্তায় বেরিয়ে পরলো। কোথায় চলে গেলো আমরা আজও তার খোঁজ পাইনি……….